আগরতলা, ১৩ মার্চ : নগরায়নের ফলে ক্রমশ কমছে রাজ্যের বনাঞ্চল, এর ফলে অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মত চরম সংকটের মধ্যে পড়ছে বন্য হাতিরা। এই হাতিদের রক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন রাজ্যের বনদপ্তরের মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা। এই উদ্যোগ সফল হলে হাতিদের রক্ষায় রাজ্যে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হবে।
এখনো রাজ্যের ৭৩ শতাংশ জায়গা বনভূমিতে ঢাকা, আগের রাজ্যে জঙ্গলের পরিমাণ আরো বেশি ছিল। রাজ্যের এই সকল জঙ্গলে এক সময় বাঘ চিতাবাঘ সহ নানা ধরনের বন্য প্রাণীর অবাধ বিতরণ ছিল এবং এই রাজ্য বন্য হাতির জন্য সারা ভারত বিখ্যাত ছিল। অনেক ঐতিহাসিকদের মতে মোগল আমলে রাজ্য'র জঙ্গল থেকে নিয়মিত ভাবে জংলি হাতিদের ধরে পুষ মানিয়ে এগুলিকে পাঠানো হতো মোগল সেনাবাহিনীতে। কিন্তু কালের বিবর্তনে লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে জঙ্গলের পরিমাণ। জঙ্গল কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান এবং বিচরণের জায়গা কমে গিয়েছে, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে না নিতে পারার কারণে বহু জাতের বন্যপ্রাণী হারিয়ে গিয়েছে রাজ্যের বনভূমি থেকে। তবে এখনো রাজ্যের তেলিয়ামুড়া মহকুমার কল্যাণপুর এবং মুঙ্গিয়াকামি এলাকার জঙ্গলে বন্য হাতিদের উপস্থিতি রয়েছে, তেমনি গোমতী জেলার দেবতামুড়া পাহাড় এবং তার আশেপাশের এলাকাতেও বন্য হাতিদের বসবাস রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে রাজ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি মানব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে খোয়াই জেলায়। বছরে একাধিকবার বন্য হাতির দল মানুষের বাড়িঘর এবং ফসলের ক্ষেতে হামলা করে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গলের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। এর ফলে একদিকে যেমন জঙ্গল ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে, তেমনি গভীর জঙ্গলের গাছ লতাপাতার নিয়মিত ভাবে কেটে ফেলছে মানুষ। তাই বছরের বেশির ভাগ সময় বন্য হাতিদের দল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে পড়ছে। বর্তমান সময়ে হাতিদের লোকালয়ে চলে আসার আরো একটি কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত জাতীয় সড়ক এবং রেললাইন হওয়ার ফলে হাতিদের চলাফেরা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে জাতীয় সড়ক এবং রেললাইন হওয়ার ফলে তাদের বিচরণের জায়গা বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক কালে জাতীয় সড়কে সংস্কার করে উন্নত মানের করা হয়েছে যার ফলে এই রাস্তা দিয়ে দিনরাত যানবাহন চলাচল করছে। এর ফলে হাতিরা ইচ্ছা থাকলেও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় জঙ্গলে খাবার সংগ্রহ করার জন্য যেতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর খোয়াই জেলায় হাতি মানব সংঘর্ষের ঘটনা কমানোর জন্য দপ্তরকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে বনদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা হাতিদের গতিবিধির উপর বিশেষ ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তারা দেখেছেন বেশ কয়েকটি জায়গা দিয়ে হাতিরা রাস্তার একপাশ থেকে অন্য পাশের জঙ্গলে যাতায়াত করতো, কিন্তু জাতীয় সড়কের সংস্কারের ফলে তারা এখন আর এর উপর দিয়ে যাওয়া নিরাপদ মনে করছে না। তাই হাতিদের চলাফেরায় যাতে কোন ধরনের বিঘ্ন না ঘটে এবং আগের মত অবাধে যাতায়াত করতে পারে তার জন্য জাতীয় সড়ক এবং রেল লাইনের নিচে দিয়ে বিশেষ করিডোর নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই করিডোরের জায়গাগুলো ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। খুব দ্রুত জাতীয় সড়কের দিয়ে হাতিদের চলাচলের করিডোর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন(এনএইচআইডিসিএল) নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ জারি করার আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা রাজ্য ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ডের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি আশা ব্যক্ত করেন এই করিডোর গুলি নির্মাণ হলে হাতিরা অবাধে জঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারবে এর ফলে লোকালয়ে আসার প্রবণতা অনেকটাই কমবে। পাশাপাশি তিনি আরো জানান, জঙ্গলের যে সকল এলাকায় হাতিরা বিচরণ করে এই এলাকাগুলোতে যাতে সারা বছর খাবারের কোন অভাব দেখা না দেয় তার জন্য বনদপ্তরকে কলাগাছ সহ অন্যান্য ফলমূল এবং হাতিদের খাদ্য উপযোগী গাছপালা লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জঙ্গলে খাবারের পরিমাণ স্বাভাবিক হলে হাতিরা লোকালয়ে আসবে না বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
0 মন্তব্যসমূহ