আগরতলা, ২৯ মার্চ: মহিলাদের স্বাবলম্বী এবং আর্থিক ভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার জন্য ভারত সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহিলাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছেও আহবান করছেন তারা যেন মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রীর এই আহব্বানে সাড়া দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের বর্তমান সরকার ও মহিলাদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এরমধ্যে অন্যতম একটি হলো গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মাধ্যমে অসহায়ক দল গঠন করে মহিলাদেরকে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে।
ত্রিপুরা রাজ্যের স্ব-সহায়ক দলের মহিলাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে উৎসাহিত করার জন্য নতুন নতুন কাজে যুক্ত করা হচ্ছে। পুতুল নাচ একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতি। আগের রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে পুতুল নাচ অনুষ্ঠিত হলেও এখন প্রায় হারিয়ে গিয়েছে এই গ্রামীণ সংস্কৃতি। তবে রাজস্থানের পুতুল নাচ ভারত এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও সুপরিচিত। যুগ যুগ ধরে এখনো রাজস্থানের বহু মানুষ পুতুল তৈরি করে এবং পুতুল নাচ দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কর্মব্যস্ত মানুষ অবসর বিনোদনের জন্য পুতুল নাচ সহ অন্য কিছু দেখার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে এখন। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে পশ্চিম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাজস্থান থেকে তিন জন পুতুল নাচ শিল্পী আনিয়ে ৩০ জন মহিলাকে পুতুল তৈরি এবং পুতুল নাচ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীনে পশ্চিম জেলার বামুটিয়া ব্লকের অন্তর্গত তালতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০ জন মহিলাকে ২৫দিন ধরে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শনিবার ছিল তাদের পুতুল তৈরি এবং পুতুল নাচ প্রশিক্ষণের শেষ দিন। গত ২৫ দিনে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী মহিলারা কেমন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তা দেখার জন্য এক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী মহিলারা এদিন পুতুল নাচ দেখান। তালতলা পঞ্চায়েত অফিসের সভাকক্ষে আয়োজিত এই পুতুল নাচের অনুষ্ঠান দেখতে উপস্থিত ছিলেন বামুটিয়া ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান দীপক কুমার সিনহা, বামুটিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণ ধন দাস, পশ্চিম জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক মেঘা জৈন, সিনিয়র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস দেববর্মা, ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের চিপ অপারেটিং অফিসার ড. দ্বীপায়ন ঘোষ, বামুটিয়ার সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অমিতাভ ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন উপস্থিত অতিথিরা। প্রশিক্ষণ নেওয়া শিল্পীরা বেশ কিছু গানের সঙ্গে পুতুল নাচ দেখান। পুতুল নাচ দেখতে সভা কক্ষে স্থানীয় এলাকার বহু মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।
এদিনের এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস, শিল্পীদের প্রতি আহ্বান রাখেন বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যে এবং মানুষদের সচেতন করার বিষয়গুলো নিয়ে পুতুল নাচ দেখানোর জন্য পাশাপাশি উন্নয়নমূলক বিষয়গুলিও পুতুল নাচের মাধ্যমে তুলে ধরা যেতে পারে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন।
এদিনের এই কর্মসূচি সম্পর্কে অতিরিক্ত জেলাশাস মেঘা জৈন বলেন, এই এলাকায় নতুন করে বহু রিসোর্ট হচ্ছে, এই রিসোর্ট গুলিতে পুতুল নাচ দেখিয়ে এবং বিভিন্ন মেলাতে পুতুল নাচ দেখিয়ে মহিলারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। এই বিষয়টি চিন্তা করে রাজস্থান থেকে তিনজন শিল্পীকে আনিয়ে পুতুল নাচের প্রশিক্ষণ করানো হয়েছে। গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মাধ্যমে এই কাজ করা হয়েছে। মহিলারা খুব উৎসাহের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং শেষ দিন খুব ভালোভাবেই তারা পুতুল নাচ দেখিয়েছেন। তারা পুতুল নাচের মাধ্যমে সমাজ সচেতনতার নানা বিষয় তুলে ধরছেন বলেও জানান তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ