Advertisement

Responsive Advertisement

রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার: মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ১১ মার্চ: রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা হচ্ছে। আগামীতে রাজ্যে একটা এডুকেশন হাব গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। 

মঙ্গলবার সিপাহীজলা জেলার বিশালগড়ের পূর্ব গকুলনগরে লিপিকা দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 
                                     অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ককবরক ও বাংলা দুটো বিষয় একসাথে নিয়ে সিবিএসই'র পাঠক্রমকে সামনে রেখে এত সুন্দর স্কুল এখানে তৈরি হয়েছে যা না দেখলে বোঝা যেত না। এখানে এসে অন্যরকম অনুভূতি হয়েছে। এরকম একটা পরিবেশে আমাদের ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখতে হবে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের। এই স্কুল গড়ে তোলার জন্য আমি ডাঃ আলেখ্য দাশগুপ্ত ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানাই। পড়াশুনা ছাড়া কিছু হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার বলছেন আগামীদিনে এই পৃথিবীটা তাদের হাতের মুঠোর মধ্যে থাকবে যাদের কাছে জ্ঞান থাকবে, শিক্ষা থাকবে। শিক্ষা ও জ্ঞান যাদের কাছে থাকবে তারাই আগামীতে পৃথিবী, দেশ ও রাজ্য চালাবে। এই স্কুল এই এলাকার জন্য একটা আদর্শ প্রতিষ্ঠান বা মন্দিরের মতো হয়ে গেছে। আমি আশা করি স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের সর্বাঙ্গীণ শিক্ষা প্রদান করবেন। আমি নিশ্চিত এই স্কুলের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল। আপাতত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রয়েছে এই স্কুল। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করা হবে। ডাঃ আলেখ্য দাশগুপ্ত তাঁর স্বর্গীয় সহধর্মিনী লিপিকা দাশগুপ্তের নামে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা খুবই প্রশংসার দাবি রাখে। মানুষ হিসেবে একদিন আমাদের পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে কাজের মাধ্যমেই আমরা বেঁচে থাকতে চাই। আমরা জনপ্রতিনিধি, আমরা জন্মেছি মানুষের জন্য, অপরের জন্য। আর সেটা সামাজিক কাজের মাধ্যমে করে দেখিয়েছেন ডাঃ আলেখ্য দাশগুপ্ত। আমি জানতে পারি এখন তারা এই জেলায় স্কুল খুলেছে। আগামীতে অন্যান্য জেলাগুলিতেও স্কুল গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করছেন। ককবরক ও বাংলা ভাষার বন্ধন মজবুত হলেই জাতি ও জনজাতির মধ্যে বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে। আমরাও বাস্তবিকভাবে সেটাই চাই। 

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের সরকার আসার পর জনজাতি অংশের মানুষের উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন বিষয় থেকে শুরু করে ককবরক পাঠ্যপুস্তক করা হচ্ছে। আমাদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনায় অনেক কিছু করা হচ্ছে। আমরা এনসিইআরটি'র পাঠক্রম চালু করেছি। স্কুলগুলিতে অভিন্ন প্রশ্নপত্র চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। সুপার থার্টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার, ট্যালেন্ট সার্চ পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বন্দে ত্রিপুরা নামে একটি শিক্ষামূলক চ্যানেল চালু করা হয়েছে। ৫টি পিএম বিদ্যা ডিটিএইচ চ্যানেল চালু করা হয়েছে। বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের বাই সাইকেল বিতরণ করা হচ্ছে। প্রয়াস প্রকল্পে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের ওয়ার্ক বুক বিতরণ করা হচ্ছে। আরক্ষা দপ্তরের কর্মীদের সন্তানদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার চালু করা হয়েছে। টিবিএসই পরীক্ষার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চালু করা জাতীয় শিক্ষা নীতি (ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি) বাস্তব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। স্মার্ট ক্লাশ, আইসিটি ল্যাব, টিঙ্কারিং ল্যাব করা হয়েছে। প্রি প্রাইমারি ক্লাশ চালু করা হয়েছে। নিপুণ প্রকল্প, মিশন মুকুল শুরু করা হয়েছে। পিএম শ্রী প্রকল্প, পিএম জনমন প্রকল্প, সিএম সাথ, সহস্র সিএম পাঠ্যক্রম সহ একের পর এক কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা হচ্ছে। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে আমরা ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন থেকে পাশ করেছি। তখন ত্রিপুরা বোর্ড ছিল না। ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটি না থাকায় ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা করতে হয়েছে। আর এখন ত্রিপুরা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি হয়েছে। শিক্ষার আমূল পরিবর্তন হয়েছে এখানে। বাইরে থেকেও মানুষ আসছেন। আমরা এখানে একটা এডুকেশন হাব গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। বেসরকারি সেক্টরেও এখানে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হচ্ছে। স্কিল ইউনিভার্সিটি, ওপেন ইউনিভার্সিটি হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ধাম্মাদিপা ইউনিভার্সিটি হচ্ছে। ত্রিপুরায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুবাদে মানুষ এখানে আসছেন। ত্রিপুরায় বিনিয়োগ করতে চাইছেন মানুষ। আগে পড়াশুনা করার জন্য আমাদের বাইরে যেতে হতো। আর এখন এখানে পড়তে আসে। এখন সিলেবাস পরিবর্তন হওয়ায় আমাদের ছেলেমেয়েরা সর্বভারতীয় স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করছে। 
                                         অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন দপ্তরের মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা, সিপাহীজলা জিলা সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিধায়ক সুশান্ত দেব, বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব, লিপিকা দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ আলেখ্য দাশগুপ্ত সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ