Advertisement

Responsive Advertisement

৬০ জন মন্ত্রী বিধায়কের হাতে এআরসি পদ্ধতির আলু তুলে দিলেন মন্ত্রী রতন লাল নাথ


আগরতলা, ২৮ মার্চ: এবছর ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যাপক পরিমাণ আলু বীজ উৎপাদিত হয়েছে, আলু বীজ উৎপাদনে রাজ্যের পুরাতন সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে। মূলত এপিকেল রুটেড কাটিং পদ্ধতি তথা এ আর সি পদ্ধতিতে আলু চাষ করার জন্য ব্যাপক পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে। শুক্রবার রাজ্য বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন সময়ে রাজ্য সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য মন্ত্রীসহ রাজ্যের ৬০ জন বিধায়ককে আড়াই কেজি করে এ আর সি পদ্ধতিতে উৎপাদিত আলুর প্যাকেট উপহার হিসেবে তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা মানিক সাহার হাতে আলুর প্যাকেট তুলে দেন প্রথমে। এরপর তিনি এই পদ্ধতিতে আলু চাষে সুবিধা এবং আগামী দিনে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ভারতে সর্বপ্রথম আলুচাষের সূচনা করেন পর্তুগীজ নাবিকরা সপ্তদশকের প্রথমার্ধে এবং পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা উত্তর ভারতে আলু চাষের ব্যপ্তি ঘটায়। ত্রিপুরার মহারাজা বীরবিক্রম মানিক্য বাহাদুর তার সময়কাল ১৯২৩-১৯৪৭ ইং এর মধ্যে আলু চাষে প্রাধান্য দেন। 
ত্রিপুরায় আলু চাষের প্রথমদিকে অন্যতম প্রধান জাতগুলো ছিল আপ-টু-ডেট, জ্যোতি, ললিত, ফুলওয়া, দার্জিলিং রেড রাউন্ড এবং সিন্দুরী। তখন ত্রিপুরা রাজ্যে আলুর গড় উৎপাদনশীলতা ছিল ১,৫০০ কেজি প্রতি কানি।
১৯৮৮-৮৯ সালে ত্রিপুরায় সর্বপ্রথম টিপিএস বা প্রকৃত আলু দানাবীজ দিয়ে আলুচাষ শুরু হয় নাগীছড়াস্থিত রাজ্যিক উদ্যান গবেষণাকেন্দ্রে যা আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানেই শুরু হয়। টিপিএস পদ্ধতিতে আলুচাষের গড় ফলন উৎপাদনশীলতা বেড়ে দাঁড়ায় ৪,০০০ কেজি প্রতি কানি।
আর্ন্তজাতিক গবেষণা কেন্দ্র এবং উদ্যান ও ভূমিসংরক্ষণ বিভাগ, ত্রিপুরা সরকারের মধ্যে ১৭ জানুয়ারী ২০২৩ইং এ একটি মৌ স্বাক্ষরিত হয় এপিক্যাল রুটেড কাটিং টেকনোলজির মধ্যেমে উন্নত পদ্ধতিতে আলুচাষ নিয়ে। এই প্রকল্পটির সময়কাল তিন বছর ২০২২-২৫ইং এবং এর শিরোনাম "বেটার সীড প্রোডাকশন অফ পটেটো থ্রু আপিকাল রুটেড কাটটিং টেকনোলজি"।
২০২৩-২৪ইং সালে সর্বপ্রথম এই পদ্ধতিতে ত্রিপুরা রাজ্যে আলুচাষ শুরু হয় এবং রাজ্যের ৮ টি জেলার ১০৪ জন কৃষককে ৫টি উন্নতজাতের যথা কুফরী মোহন, কুফরী লিমা, কুফরী হিমালিনী, কুফরী উদয় এং, কুফরী থর-২ মোট ১৫.৭৫ মেট্রিক টন বীজআলু হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র থেকে এনে সরবরাহ করা হয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে ভারতবর্ষের প্রধান আলু বীজ উৎপাদনকারী রাজ্যগুলো হল উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহার। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র থেকে আনার মূল উদ্দেশ্য হল এটি আন্তর্জাতিক গবেষণাকেন্দ্র দ্বারা অনুমোদিত এবং নির্বাচিত। বর্তমান সময়ে এই ৫টি জাতের আলুচাষ করে রাজ্যের কৃষকরা অত্যন্ত ভালো ফলন পাচ্ছেন। এবং এ আর সি আলু চাষ নিয়ে অত্যন্ত উৎসাহিত। দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ইং রবি মরশুমে প্রায় চারগুণ কৃষক অর্থাৎ ৪০২ জন কৃষকের মধ্যে ৪০ মেঃটন বীজ সরবরাহ করা যা গতবছরের কৃষকেরাই উৎপাদন করেন। এই বছরে অভূতপূর্ব ফলন পাওয়া যায়। রাজ্যের সম্ভাব্য গড় উৎপাদনশীলতা দাড়ায় ৬,০০০ কেজি প্রতি কানি। শস্য কর্তনের মাধ্যমে রাজ্যের সর্বোচ্চ গড় উৎপাদনশীলতা ১০,০০০ কেজি প্রতি কানি পরিলক্ষিত হয় দক্ষিন ত্রিপুরার বকাফা কৃষি মহকুমার বেতাগার কৃষকে শ্রী সজল ভৗমিকের আলু ক্ষেতে। এবছর ৪০২ জন কৃষকেদের কাছ থেকে ২৮ টাকা প্রতিকেজি মূল্যে ৪০০ মেট্রিক টন বীজ আলু ক্রয়করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে যা আগামী বছরে অর্থাৎ ২০২৫-২৬ইং রবি মরসুমে আরো দশগুণ প্রায় চার হাজার কৃষকেদের মধ্যে সরবরাহ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, ২০২৪-২৫ইং এআরসি আলুচারা থেকে উৎপন্ন ৫০ বীজের মূল্য ৫০ টাকা প্রতিকেজি ধার্য্য করা হয়েছে যা মূলতঃ ৪টি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র ধলাই, খোয়াই গোমতী, উনকোটি এবং সি ভি বীরচন্দ্রমনু এবং ১৩টি কৃষি মহকুমার কিছু সংখ্যক নির্বাচিত কৃষক থেকে ক্রয় করা হবে।
সরকারের উদ্দেশ্য ২০২৯-৩০ইং সালে আলুর সার্টিফাইড বীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভর করে তোলা। আমাদের মধ্যে একটি প্রচলিত ধারনা যে বড় সাইজের আলুর গুনগতমান ভালো নয় এবং বিক্রির সম্ভবনাও কম। কিন্তু প্রক্রিয়াকরন শিল্পে যে আলুর শর্করা পরিমান বেশী, কম জলীয় বাষ্পযুক্ত এবং বর্হিভাগ মুচমুচে হওয়ায় এবং সাইজ ৪-৬ ইঞ্চি ও ওজন ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম, এই ধরণের আলুর বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক প্রক্রিয়াজাত কেম্পানীতে চাহিদা অনেক বেশী হয় বৈশ্বিক ফাস্টফুড চেইনের বিভিন্ন খাবার যথা ফ্রোজেন পটেটো, ফেঞ্চ ফ্রাইস এবং পটেটো চিপস তৈরী করা হয়। প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিতে এ আর সি আলুর দুটি জাত যথা- কুফরী-চিপসোনা-৩ এবং কুফরী সঙ্গম এর চাহিদা রয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ